গাংনীতে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা কর্মস্থলে না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতা বিক্রেতা ও দলিল লেখকরা
মেহেরপুর প্রতিনিধি
গাংনীতে সরকারি বিধি মোতাবেক সরকারী কর্মকর্তা কর্মস্থলে থাকার কথা থাকলেও সেখানে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে বাড়ীতে অবস্থান করায় ১সপ্তাহ অফিস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতা বিক্রেতা ও দলিল লেখকরা। গাংনী সাব রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান,প্রায় ৪ মাস গাংনী সাব রেজিস্ট্রারের অফিস বন্ধ থাকায় রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখকসহ অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগন কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন,সরকার ২৬ মার্চ থেকে সরকারী ভাবে লকডাউন ঘোষনা করার ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি।লকডাউনের আগেও ১মাস সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় বন্ধ হয়েছিল সকল কার্যক্রম।আমরা সরকারী সহযোগীতার জন্য বিভিন্ন জয়গায় আবেদন করলেও আমরা কোন সহযোগীতা পাইনি।
ফলে দুর্ভোগে পড়েছে অফিসের সকল স্টাফ। তিনি আরো বলেন,গাংনী উপজেলার সকল কর্মকর্তা নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকলেও আমাদের স্যার ২৫মার্চ সকাল ১১টার সময় কর্মস্থল ত্যাগ করে নিজ বাড়ী ঢাকাতে রয়েছেন।স্যার কবে আসবে ঠিকনাই।ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ভুক্তভোগী এলাকার মানুষ। সরকার লকডাউন প্রত্যাহার করে নিলেও আমাদের স্যার কর্মস্থলে না থাকায় আবারো এক সপ্তাহ বন্ধ রয়েছে সকল কার্যক্রম। এদিকে,জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
এছাড়া এ অফিসের সঙ্গে জড়িত প্রায় শতাধিক মহুরা ও নকলনবীশ লেখকরা বেকার ও অলস সময় পার করছেন। অফিস সুত্রে জানা যায়, গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইমরুল হুসাইন ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর এখান থেকে বদলি হওয়ার পর কোন সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় ১মাস বন্ধ হয়েছিল গাংনীর সাব রেজিস্ট্রী অফিস।নতুন সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা ফেব্রæয়ারির ৯ তারিখে এখানে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়।মাত্র ১৭দিন অফিস চলার পর করোনা প্রতিরোধে সরকার লকডাউন ঘোষনা করেন।
সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সকল কর্মকর্তা কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ থাকলেও সেখানে মাহফুজ রানা সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৫শে মার্চ কর্মস্থল ত্যাগ করেন। ফলে আবারো জমি রেজিস্ট্রী অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।বন্ধ হওয়ার কারণে এ উপজেলার শত শত একর জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। গাংনী উপজেলা আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে এ জেলার অর্ধেক।তাই প্রতি মাসে ১হাজার থেকে ১হাজার ৫০০ দলিল রেজিস্ট্রী হয়ে থাকে এ উপজেলায়।
গাংনী শহরের হাসপাতাল বাজারের হায়দার আলী জানান,আমি জমি কিনে দিনক্ষণ ঠিক করে জমি বিক্রেতা বানিয়াপুকুর গ্রামের মুসফিককে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি।জমি বিক্রেতা একজন অসুস্থ মানুষ। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় আমার জমি রেজিস্ট্রী হচ্ছে না।জমি রেজিস্ট্রী হওয়ার আগে উনি মারা গেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে। গাংনী উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আবুসামা জানান,আমি জমি কিনে বিপদে পড়েছি জমির টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি।কিন্তু রেজিস্ট্রী অফিস বন্ধ থাকায় জমি রেজিস্ট্রী করা হয়নি।
সে পরে জমি রেজিস্ট্রী দিতে গড়িমশি করছে। বানিয়াপুকুর গ্রামের শাহিনুর রহমান বলেন, আমি জমি বিক্রি করতে না পেরে আমার পরিবারকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে পারছিনা। গাংনী উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফাকের আলী জানান,লকডাউনের কারণে রেজ্রিস্ট্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গাংনী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ৭০ জন দলিল লেখক ও প্রায় ১৫০ জন সহকারী এখন বেকার জীবন-যাপন করছে।
সরকার লকডাউন প্রত্যাহার করে নিলেও আমাদের স্যার কর্মস্থলে না থাকায় রেজিস্ট্রী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারীরা জানান,প্রতিদিনই দলিল গ্রহীতা,সেবা গ্রহীতারা অফিসে এসে গালাগাল করে যাচ্ছেন।আমরা তাদের কথার কোনো উত্তর দিতে পারছিনা। এব্যাপারে জানতে গাংনী সাব রেজিস্ট্রী অফিসে গেলে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।